দেয়ালিকীয়

বিবর্তনে উত্তাল শাহবাগঃ যে কথা যায়না মুখে বলা 

তারুণ্যে উত্তাল শাহবাগ আন্দোলনের শুরু ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসীর দাবী দিয়ে। পরে সে দাবী সম্প্রসারিত হয় যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসীর দাবীতে। তার পর যুক্ত হয় জামাত শিবিরের প্রতিষ্ঠান বয়কটের দাবী। এরপর আসে খোদ জামাত শিবির নিষিদ্ধের দাবী। এরপর শাহবাগ থেকে স্লোগান দেওয়া হয় ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে।

নিরপেক্ষ আন্দোলন বলে শুরু হয়, কিন্তু শাহবাগের নেতৃত্বে থাকা ডাঃ ইমরান রংপুর মেডিকেলের ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের ভূতপূর্ব সভাপতি! নিরপেক্ষ হলেও অগ্নিকন্যা লাকী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী। শাহবাগের লীডাররা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকেও নিজেদের কে নিরপেক্ষ এবং ব্লগার বলে পরিচয় দিয়ে মানুষের বিশ্বাস ভংগ করেছেন। এরই ফলশ্রুতিতে শাহবাগ হারায় তার নিরপেক্ষতা ও শুরুর দিনগুলোরমত জনপ্রিয়তা।

সাধারণ ইসলামপ্রিয় জনগণ ও আলেম ওলামাগণ প্রথমে আন্দোলনকে সমর্থন করলেও পরবর্তিতে আন্দোলনকারীদের মূল দাবী থেকে বিক্ষিপ্ত হওয়া, দল নিরপেক্ষতাহীনতা এবং সর্বোপরি আন্দোলনকারীদের ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে  তাঁরা আন্দোলন থেকে সরে দাড়ান। শাহবাগের জনপ্রিয়তার সুযোগ নিয়ে শাহবাগ আন্দোলনের মধ্যমণি কিছু নাস্তিক ব্লগারের বাড়াবাড়িও সাধারণ মানুষের এই আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণ বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন।

এরই মধ্যে জনৈক স্বঘোষিত নাস্তিক 'থাবা বাবা' নিক এ বিভিন্ন ব্লগে লেখা রাজীব হায়দার নৃশংস ভাবে খুন হন। শাহবাগের আন্দোলনকারীরা এই স্বঘোষিত নাস্তিকের জানাযা পড়েন তাও আবার নারীপুরুষ একত্রে, ৪ তাকবীরের পরিবর্তে ৩ তাকবীরে। এ নিয়ে সচেতন মুসলিম মহলে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, কেননা কুরআনে স্বয়ং আল্লাহ মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই মর্মে কঠোর ভাবে নিষেধ করে দিয়েছেন যেন কোন মুনাফিকের জানাযা পড়া না হয়। ইসলামের এমন একটি স্বতস্বিদ্ধ বিষয়কে অবমাননা করায় সারা দেশ ফুঁসে ওঠে। দেশের সাড়ে ৪ লক্ষ মসজিদ থেকে নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে মিছিল করে প্রতিবাদ জানায় দেশবাসী।

এদিকে বামপন্থি মিডিয়া গুলো রাজীব হায়দারকে শহীদ এবং তার নাস্তিক্তাকে লুকানোর অপচেস্টায় মেতে ওঠে , তারা সাধারণ মুস্ললীদের এই আন্দোলনকে জামাত শিবিরের আন্দোলন বলে চালিয়ে দেওয়ারও প্রাণান্ত চেষ্টা চালায়। বাইতুল মুকাররমে মুসল্লিদের উপর পুলিশ গুলি চালালে শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলনে খানিকটা সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।


যদি শাহবাগ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবী না তুলে যথার্থ বিচার দাবী করা হত তাহলে হয়ত ট্রাইব্যুনাল তাঁর বিচার প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু ভাবে এবং চাপহীন ভাবে পরিচালনা করতে পারতেন। আর বিচারের রায় নিয়ে জামাত শিবিরও তখন আন্দোলনে নামার এবং বিচার বানচাল করার কোন ইস্যু খুঁজে পেতনা, দেশ আজ যে সহিংসতার সম্মুখীন তাও হয়তো নাও হতে পারতো।

সরকারের সহায়তাপুষ্ট এই আন্দোলনটি যদি শুধু যুদ্ধাপরাধীদের যথার্থ বিচাররের দাবীতেই অটল থাকতো, রাজনৈতিক ভাবে নিরপেক্ষ থাকতো এবং নাস্তিকতাকে প্রশ্রয় না দিত তবে এটা হতে পারত স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় 'তরুণ ও গণমানুষের' আন্দোলন। আর সাফল্যও আসত হাতে হাতে।

সম্পূর্ণ ভিন্ন অথচ রিলেটেড (সাইদির ফাঁসীর রায়ে জামাতের সহিংসতা ও সরকারের নির্বিচার হত্যার ব্যাপারে) কিছু কথাঃ

আমাদের কারোরই উচিৎ হবে না কোনও ভাবে চলমান সহিংসতাকে উস্কে দেয় এমন কোন কথা বলা বা লেখা। সহিংসতায় যারা মারা পড়ছেন এরা সবাই আমাদেরই কারও ভাই, কারও সন্তান, কারও বাবা আর কারও স্বামী। এই সহিংসতা যারা করছেন তাদের জন্য আমাদের প্রশ্ন-একজন আসামীর মুক্তির জন্য লক্ষ লক্ষ  সাধারণ মানুষের জান ও মালের ক্ষতি করে এমন অদ্ভুত আন্দোলন ইসলাম সমর্থন করে কী? আর প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের কাছেও আমাদের প্রশ্ন- বিনা বিচারে ভিন্নমতের উপর দমননীতি চালিয়ে কোন শাসক কখনও টিকে থাকতে পেরেছে কী?

আসুন আমরা সবাই মহান আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করি তিনি যেন সহিংসতা কারী জামাত শিবিরের নেতাকর্মীদেরকে এমন বিদ্ধংসী মনোভাব থেকে, ট্রাইবুন্যাল কে কোনও চাপের কারণে যেন সুষ্ঠু বিচার থেকে সরে আসা থেকে এবং সরকারকেও তার দমনপীড়ন ও বিনা বিচারে আন্দোলন কারীদের হত্যা করার মত জঘন্য অপরাধ থেকে সরে আসার মতো শুভবুদ্ধির উদয় করে দেন। আমীন